সেই জয়নালের ট্রেড সেন্টারে রাজউকের হানা

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত আল জয়নালের মালিকানাধীন আল জয়নাল ট্রেড সেন্টারে অভিযান চালিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক। অনুমোদন নেই এ অভিযোগে রাজউকের একটি টিম বুধবার ২৯ আগস্ট দুপুরে শহরের চাষাঢ়াতে ওই অভিযান চালানো হয়। তবে প্রায় ঘণ্টাখানেক টিম সেখানে উপস্থিত থাকলেও শেষে কোন অ্যাকশনে যায়নি।
রাজউকের জোন ৮ এর পরিচালক মাকসুদুল আরেফিন জানান, তাদের কাছে অভিযোগ ছিল ট্রেড সেন্টারের কোন অনুমোদন নেই। কিন্তু ভবন মালিকেরা জানিয়েছেন অনুমোদন আছে। সে কারণে বৃহস্পতিবার নথিপত্র রাজউক অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত পুলিশের একটি নাশকতা মামলায় পৃষ্ঠপোশক হিসেবে রয়েছে আল জয়নালের নাম যিনি এখন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ওই মামলার প্রতিবেদন অচিরেই দাখিল করা হতে যাচ্ছে। আর সে কারণেই জয়নাল এখন ক্ষমতাসীন দলের জোটভুক্ত দল জাতীয় পার্টিতে গা ভাসিয়েছেন। এর আগে তাঁতী লীগে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করলেও সেখানে এ ব্যাপারে কোন সবুজ সংকেত না পাওয়ার কারণেই তিনি এবার জাতীয় পার্টিতে গিয়েছেন।
সদর উপজেলার ফতুল্লায় কাতার প্রবাসীর স্ত্রীর জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে আল জয়নালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখলকৃত জমি থেকে কাতার প্রবাসীর স্ত্রী সুরাইয়া বেগমকে উচ্ছেদ করতে নানা ধরনের হুমকি দেয়ার কারণে থানায় সাধারন ডায়েরী দায়ের করেছে। ১০ অক্টোবর দুপুরে ফতুল্লার হরিহরপাড়া গুলশান রোড এলাকার আব্দুল ওহাবের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম বাদী হয়ে আল জয়নালের বিরুদ্ধে সাধারন ডায়েরী দায়ের করে।
ফতুল্লায় জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে আম মোক্তার নামা দলিল করে জমি দখলের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামের পৃষ্ঠপোশকতাকারী আল জয়নাল সহ তার অনুগামী ৬ জনের বিরুদ্ধে প্রতারনা মামলায় ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। উপেন্দ্র চন্ত্র সাহা বাদী হয়ে মামলা করলে গত ৪ এপ্রিল জেলা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিবাদী আল জয়নাল সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়।
২০১৪ সালের নভেম্বরে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এ মঞ্জুর কাদেরকে টেলিফোনে পীর জাকির শাহ হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই সময়ে এ ঘটনায় প্রথম আলো সহ জাতীয় দৈনিকগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, এ ঘটনায় ওসি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে ওসি অভিযোগ করেন, সদর মডেল থানার বিপরীতে অবস্থিত বহুতল আবাসিক ভবন আল জয়নাল প্লাজার মালিক জয়নাল আবেদীন প্রতি রাতে এশার নামাজের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাইক লাগিয়ে উচ্চ স্বরে জিকির প্রচার করেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন জানান। সদর থানার কর্তৃপক্ষ দুই মাস আগে পুলিশ সুপারের নির্দেশ অনুযায়ী জয়নাল আবেদীনকে ডেকে বাইরে মাইক লাগিয়ে শব্দদূষণ না করে এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতার অনুরোধ জানান। কিন্তু জয়নাল আবেদীন তাতে কর্ণপাত করেননি। এলাকাবাসীর অনুরোধে গত সপ্তাহে জয়নাল আবেদীনের মাইক জব্দ করা হয়। শনিবার পীর জাকির শাহর এক ভক্ত ওসিকে মুঠোফোনে জাকির শাহকে ধরিয়ে দেন। পীর জাকির শাহ ওসিকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘কীভাবে থানায় ওসিগিরি করবি, তা দেখিয়ে দেব। মন্ত্রীসহ অনেক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা আমার মুরিদ।’ তিন দিনের মধ্যে ওসিকে বদলিসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন বলে হুমকি দেন পীর।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে প্রথমবারের মত মামলা হয়। মামলায় ১১ জনকে আসামী করা হয়। সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ২০০৯ এর ৬(২)/১০/১৩ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংগঠন, গোপন ষড়যন্ত্র, অপরাধ সংঘঠেন পরস্পর সহযোগিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আসামীরা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে অস্থিতিশীল ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। আসামীরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিরুদ্ধে গোপন সন্ত্রাসের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। আসামীদের বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ডে পৃষ্ঠপোশকতা ও আর্থিক সহায়তাকরী হিসেবে খবিরউদ্দিন, জয়নাল, আলমাস ও ইব্রাহিম সহ অনেকেই সক্রিয়ভাবে সম্পৃকত রয়েছে বলে জানা গেছে।
সবশেষ নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও জয়নালের ছিল ভিন্ন আচরণ। ভোটের আগে আওয়ামীলীগের এমপি শামীম ওসমান যখন নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জুয়েল মোহসীন পরিষদকে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চান তখন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী আল জয়নাল এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পরিষদকে পরাজিত করার ষড়যন্ত্রে নেমেছিলেন অভিযোগ তুলেছিলেন আইনজীবীদের মধ্যে থেকে।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে ফতুল্লায় সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলের বাবা তার জীবনের শেষ আয়ের টাকা দিয়ে ৪শতাংশ জমি কিনেন। কিন্তু আল জয়নাল সেই জমির চার দিকের জমিগুলো ক্রয় করে জুয়েলের এ জমি দখলের চেষ্টা করেন। প্রভাব খাটিয়ে জুয়েলের কাছ থেকে জমি ক্রয় করারও প্রস্তাব দেয় জয়নাল। জমিটি বিক্রি করতে সম্মত না হওয়ার কারণে জোর করে জয়নাল দেয়াল নির্মাণ করেন। ওই সময় জয়নালের সন্ত্রাসী বাহিনী জুয়েলের আপন ভাইকে মারধর করে চোখ উপড়ে ফেলেছিল। এ নিয়ে জুয়েল আদালতে মামলা করলে সেই মামলায় জয়নালের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে একই দিন জয়নাল মীমাংসার প্রস্তাবের শর্তে জুয়েলের জিম্মায় জয়নালকে জামিন দেন আদালত। ওই ঘটনা নিয়ে জুয়েলের বিরুদ্ধে বিষোদাগার শুরু করে জয়নাল।