সাখাওয়াত মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি পদে নাই!

নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির বাইরে গিয়ে আলাদা কর্মসূচি পালন সহ সর্বশেষ তার অনুুসারীদের দিয়ে কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করানের অভিযোগে মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের আর থাকা হচ্ছে না।
মহানগর বিএনপির কমিটি হওয়ার পর থেকেই কমিটির নেতারা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে কাছে টানতে চাইলেও এতদিন সাখাওয়াত নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। মহানগর কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করায় এবার অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান মহানগর বিএনপির নেতাদের কাছে ঘেঁষতে চাইলেও নেতারা আর সাখাওয়াত হোসেন খানকে চাচ্ছেন না।
যার ধারাবাহিকতায় গত ২২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কার্য নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রায় সকলেই অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের বহিস্কার চেয়েয় বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই সাথে তাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ওই সভায় মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু পূর্ণাঙ্গ কমিটির সকল নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দল এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আজকে প্রতিহিংসার কারাগারে বন্দী। সেখানে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে সমস্যার সমাধান না চেয়ে সরকারি দলের উস্কানিতে দলকে বিপর্যস্ত করার জন্য তারা এই মামলা দায়ের করছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের মধ্যে কোন্দল এবং উপদল সৃষ্টি করে যারা সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তারাই এই মামলার পিছনের কারিগর। পর্দার অন্তরালে থেকে যে দুইজনকে দিয়ে মামলা করিয়েছে, এই শহরের সবাই তাদেরকে মূলত অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন অনুসারী হিসেবে জানে এবং চিনেন। কারণ সাখাওয়াত হোসেন খানের সকল কর্মর্কান্ডেই তাদেরকে তার পাশেই দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, মহানগর বিএনপির ব্যানারে আলাদা কর্মসূচি পালন করে নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশে বিএনপির ভাবমূর্তিক ক্ষুন্ন করে, যারা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সাথে বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে দলকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং সাংগঠনিকভাবে যারা আমাদের মহানগর বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অসাংগঠনিক কাজকর্ম করে সাধারণ নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে, তাদের ক্ষমা নাই। মহানগর বিএনপির পূূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের পর জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। সেই অনুষ্ঠান বয়কট করে ওইদিনই অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান তার দুই সহযোগীকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন। এই গর্হিত অপরাধের জন্য সাখাওয়াত হোসেন খানকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দল থেকে বহিস্কার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে চিঠি পাঠানো প্রয়োজনর বলে মনে করি।
যুগ্ম সম্পাদক আবদুস সবুর সেন্টু বলেন, দলের সকল কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও দলীয় কর্মসূচিতে সে থাকে না। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মহানগর বিএনপির আলাদা ব্যানারে কর্মসূচি পালন করে থাকেন। তার বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে কেন্দ্র অনুমোদিত মহানগর বিএনপির প্রতি সে দীর্ঘ দিন অনাস্থা জানিয়ে আসছে। সে হিসেবে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নৈতিকভাবে কেন্দ্র অনুমোদিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ সভাপতির পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাউসার আশা বলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি পদ পাওয়ার পর থেকেই অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান দলীয় শৃঙ্খলার তোয়াক্কা করেনি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সম্মতির বাইরে গিয়ে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে। তার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে মূল দলের পাশপাশি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোতেও কোন্দল সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সবকিছুতেই তিনি নাটের গুরু হিসেবে কাজ করে থাকেন। আর তাই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির অন্যান্য নেতারাও বক্তব্য রাখতে গিয়ে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তাদের বক্তব্যের জবাবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ এটিএম কামাল বলেন, আমরা একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছি। দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সবাইকে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ১ম সহ সভাপতি পদে রয়েছেন, যা অত্যন্ত গৌরবের ও মর্যাদার। কিন্তু তা উপলব্দি করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আমি বিভিন্ন সময় তাকে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেও তার কোর সাড়া পাইনি। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস ছালাম আযাদ ভাইয়ের সামনে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে ফোন করে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের অনুরোধও করেছি। কিন্তু তারপরেও তিনি আসেন নাই।
তাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের মধ্যে কোন্দল এবং উপদল সৃষ্টির দায়ে ও দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে কমিটির ১ম সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশের প্রস্তাব উপস্থানের সিদ্ধান্ত হয়।